অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তা ও ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষাসহ সকল সংগ্রাম ও আন্দোলনের উৎস ও প্রেরণা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক বাঙালির অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হলে আমাদের সেই চেতনাই বিশ্বে প্রসারিত হয়। জাতিসংঘের ঘোষণায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এ দিবস ‘১৯৫২ সালের একুশে ফ্রেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতি’।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন কানাডাপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এবং কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক সংগঠন ‘মাতৃভাষা প্রেমিক গোষ্ঠী’। কিন্তু বাস্তবে এ সাফল্য এসেছে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ ও সময়-উপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে। তাঁরই ত্বরিত প্রচেষ্টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত সময়ে ইউনেস্কো-য় এ প্রস্তাব প্রেরিত হলে তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। অতঃপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর ১৯৯৯ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ঘোষণা করেন যে, পৃথিবীর বিকাশমান ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলির মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় গবেষণার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। তিনিই ১৫ মার্চ ২০০১ ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি এ আনান-এর উপস্থিতিতে এ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা আন্দোলনের তথ্যসংগ্রহ ও গবেষণা এবং ইউনেস্কোর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত তথ্যাবলি পৌঁছে দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আইন ২০১০ অনুযায়ী তিনিই এ ইনস্টিটিউটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাঁর সরকারের উদ্যোগের ফলেই ইনস্টিটিউট পরিণত হয়েছে ইউনেস্কো-র ক্যাটেগরি ২ প্রতিষ্ঠানে। সময়ের অগ্রযাত্রায় ইনস্টিটিউট ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, সে-দিন খুব দূরে নয় যে, ইনস্টিটিউট বিশ্বের মাতৃভাষা গবেষণার অন্যতম অভিকেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে।